রূপান্তরিত কাণ্ড (পাঠ ৫-৭)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান উদ্ভিদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য | - | NCTB BOOK
609
609

তোমরা জান, কান্ড সাধাণরত মাটির উপরে অবস্থান করে এবং পাতা, ফুল ও ফল ধারণ করে। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে সাধারণ কাজ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পন্ন করার জন্য কাণ্ডের আকৃতিগত ও অবস্থাগত পরিবর্তন ঘটে। এ ধরনের পরিবর্তনকে কাণ্ডের রূপান্তর বলে। অবস্থান অনুযায়ী রূপান্তরিত কান্ড তিন প্রকার, যথা- ১)
ভূ- নিম্নস্থ
২) অর্ধ বায়বীয় ও
৩) বায়বীয়।

চিত্র-৩.১২: জননমূল

ভূ নিম্নস্থ রূপান্তরিত কাণ্ড প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা, খাদ্য সঞ্চয় এবং অঙ্গজ উপায়ে বংশবিস্তার করার জন্য কিছু কিছু উদ্ভিদের কান্ড মাটির নিচে বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের কান্ডকে ভূনিম্নস্থ রূপান্তরিত কাণ্ড বলে। এরা চার প্রকারের, যথা- স্ফীত কন্দ, মৌলকান্ড বা রাইজোম, কন্দ ও গুঁড়িকন্দ।

টিউবার বা স্ফীত কন্দ গোল আলু স্ফীতকন্দের উদাহরণ। স্ফীত কন্দে পর্ব, পর্বমধ্য, শঙ্কপত্র ও কাক্ষিক মুকুল থাকে। শঙ্কপত্রের কক্ষে গর্তের মতো অংশকে "চোখ" বলে। অনুকূল ঋতুতে "চোখ” হতে কাক্ষিক মুকুল বৃদ্ধি পেয়ে নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি করে। খাদ্য সঞ্চয়ের জন্য স্ফীত হয়ে এরা গোলাকার রূপ ধারণ করে।

চিত্র-৩.১৩: টিউবার

রাইজোম: আদা, হলুদ প্রভৃতি উদ্ভিদের কাণ্ড রাইজোম জাতীয়। এরা মাটির নিচে খাদ্য সঞ্চয় করে ভূমির সাথে সমান্তরাল বা খাড়াভাবে অবস্থান করে এদের সুস্পষ্ট পর্ব ও পর্বমধ্য থাকে। পর্ব হতে শঙ্কপত্র ও অস্থানিক মূল এবং শঙ্কপত্রের কক্ষে কাক্ষিক মুকুল উৎপন্ন হয়।

চিত্র-৩.১৪: রাইজোম

কন্দ: পিঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি উদ্ভিদের কান্ড এই প্রকারের। এদের কান্ডটি (কন্দ) খুবই ক্ষুদ্র, গোলাকার ও উত্তল। পর্ব ও পর্বমধ্যগুলো সংকুচিত। পুরু ও রসালো শঙ্কপত্রগুলো এমনভাবে অবস্থান করে যে কন্দটিকে দেখা যায় না। এ কান্ডের নিচের দিক থেকে প্রচুর অস্থানিক গুচ্ছমূল বের হয়।

চিত্র-৩.১৫: কন্দ

গুঁড়িকন্দ: ওলকচু গুড়িকন্দের উদাহরণ। এ ধরনের কান্ড বেশ বড়ো। আকৃতিতে প্রায় গোলাকার। এতে সুস্পষ্ট পর্ব ও পর্বমধ্য থাকে। শঙ্কপত্রের কক্ষে উৎপন্ন পার্শ্ব বা কাক্ষিক মুকুলগুলি বড়ো হয় এবং শিশু গুঁড়িকন্দের সৃষ্টি করে।

অর্ধবায়বীয় রূপান্তরিত কান্ড

নরম কাণ্ডযুক্ত (বিরুৎ) উদ্ভিদে এক ধরনের বিশেষ শাখা উৎপন্ন হয়। এ শাখাগুলো অঙ্গজ প্রজননের মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি করে থাকে। মাটির উপরে বা সামান্য নিচে অবস্থিত এ ধরনের দুর্বল শায়িত রূপান্তরিত কান্ডকে অর্ধবায়বীয় কাণ্ড বলে। এরা চার প্রকারের হতে পারে।

রানার বা ধাবক: থানকুনি, দুর্বাঘাস, আমরুল ইত্যাদি উদ্ভিদের কান্ডের নিচের পর্বের কাক্ষিক মুকুল থেকে যে শায়িত শাখা জন্মায় তাকে ধাবক বলে।

স্টোলন বা বক্র ধাবক এরা এক বিশেষ ধরনের ধাবক। কচু উদ্ভিদের গোড়া থেকে লম্বা শাখা বের হয়। এ শাখার শুধুমাত্র পর্বগুলি অস্থানিক মূলের সাহায্যে মাটি ধরে রাখে বাকি শাখাটি বক্রভাবে অবস্থান করে। কক্ষে সৃষ্ট মুকুল থেকে পরে নুতন উদ্ভিদ জন্মায়।

অফসেট: টোপাপানা, কচুরিপানা নামক জলজ উদ্ভিদের পর্বমধ্যগুলো ছোটো ও মোটা হওয়ার কারণে কাণ্ডকে খর্বাকৃতি দেখায়। এদের অফসেট বলে।

সাকার বা উর্ধ্ব ধাবক: চন্দ্র মল্লিকা, বাঁশ প্রভৃতি উদ্ভিদের শায়িত কাক্ষিক মুকুল থেকে উৎপন্ন হয়ে শাখাটির অগ্রভাগ মাটির উপরে চলে আসে এবং নুতন উদ্ভিদ উৎপন্ন করে।

বায়বীয় রূপান্তরিত কান্ড
এ সকল কাণ্ড মাটির উপরে স্বাভাবিক কান্ডের মতো অবস্থান করে কিন্তু বিশেষ ধরনের কাজ যেমন- খাদ্য তৈরি, অঙ্গজ প্রজনন, আত্মরক্ষা, আরোহণ ইত্যাদি কাজের জন্য রূপান্তরিত হয়ে থাকে। এরা চার প্রকারের হতে পারে।

ফাইলোক্যাড বা পর্ণ কান্ড ফনীমনসা জাতীয় উদ্ভিদটিই এ ধরনের কাণ্ডের উদাহরণ। এ ধরনের কান্ড পাতার মত চ্যাপ্টা ও সবুজ, যার ফলে এরা খাদ্য তৈরি করতে পারে। পাতাগুলো কাঁটায় পরিণত হয়ে উদ্ভিদের আত্মরক্ষার কাজ করে।

থর্ন বা শাখা কণ্টক: অনেক সময় কাক্ষিক মুকুল শাখা মুকুল তৈরি না করে শক্ত ও সুঁচালো কাঁটায় রূপান্তরিত হয়। বেল, ময়নাকাঁটা, কাঁটা মেহেদি ইত্যাদি উদ্ভিদে কাঁটার মতো শাখা কণ্টক দেখা যায়।

স্টেম টেনড্রিল বা শাখা আকর্ষী: ঝুমকোলতা, হাড়জোড়া ইত্যাদি দুর্বল আরোহী উদ্ভিদের পত্রকক্ষ থেকে সুতার মতো সরু, লম্বা ও প্যাঁচানো যে অংশগুলো বের হয় তাকে শাখা আকর্ষী বলে। আকর্ষীতে পাতা উৎপন্ন হয় না।

বুলবিল: কোনো কোনো আরোহী উদ্ভদের কাক্ষিক মুকুল শাখায় পরিণত না হয়ে প্রচুর খাদ্য সঞ্চয় করে গোলাকার মাংসপিণ্ডের আকার ধারণ করে। এরাই বুলবিল। যেমন: গাছ আলু।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion